আপডেট: জানুয়ারি ২১, ২০১৯
‘আমাক কিডা দিবি ভাতার কাড (কার্ড)? ম্যালা দিন ধরে চিয়ারম্যান মেমবরির কাছে ঘুরল্যম। কিন্তু কাড করে দিলো লয়। অন্য ওয়াডের মেমবর ২ হাজার টেকা চাইছিল। কিন্তু টেকা দিব্যর পারি নাই জন্যি ভাতার কাড হয় নাই। আর কত বয়স হল্যি পারে আমি ভাতার কাড পাবো?’
সোমবার সকালে পাবনার চাটমোহর উপজেলার ওষুধ কিনতে বাজারে এসেছিলেন বিষ্টপদ সূত্রধর। টাকা কম পড়ে যাওয়ায় কয়েকজনের কাছে ধার চান তিনি। না পেয়ে মন খারাপ করে বসেছিলেন দোলবেদীতলা এলাকায়। এ সময় এই প্রতিবেদক ‘ভাতা পান না’ জিজ্ঞেস করলে তিনি এসব কথা বলেন।
উপজেলার বিলচলন ইউনিয়নের বোঁথড় গ্রামের ৮৩ বছর বয়সী (জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী) বিষ্টপদ সূত্রধরের ভাগ্যে এখনও জোটেনি বয়স্কভাতার কার্ড।
একসময় কাঠমিস্ত্রির কাজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করা এ মানুষটি এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ। কাজ করে সংসার চালানোর মতো শক্তিও নেই শরীরে। দীর্ঘদিন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে আকুতিমিনতি করেও মেলেনি সহযোগিতা। আর কত বয়স হলে তিনি বয়স্কভাতা পাবেন এমন প্রশ্ন তার সবার কাছে।
বিষ্টপদ জানান, পর পর দুবার স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর চোখে ভালো দেখতে পান না। কাজ করতেও পারেন না। স্ত্রী (মহামায়া) মারা যাওয়ার পর নিঃসঙ্গতা জেঁকে বসে। প্রতি মাসে দুই ছেলে সঞ্জয় ও শিবজয়ের পৃথক সংসারে হাতবদল হতে হয় এ বৃদ্ধকে! গড়ে প্রতিদিন তার ১২০ টাকার ওষুধ খেতে হয়।
দুই ছেলে কাঠমিস্ত্রির কাজ করে যা উপার্জন করে তা দিয়ে তাদের সংসারই চলে না। তবু তারা কিছু টাকা দেয়। তবে ওষুধ কিনতে গিয়ে টাকা কম পড়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে মানুষের কাছে হাত পাততে হয়। শেষ বয়সে একটি বয়স্কভাতার কার্ডের জন্য আকুল আবেদন এ বৃদ্ধের।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিলচলন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী যুগান্তরকে বলেন, ‘এসব মানুষেরই আগে পাওয়া উচিত। বিষয়টি আমার মেমোরিতে ছিল না। এর পর বরাদ্দ এলে তাকে (বিষ্টপদ) অবশ্যই কার্ড করে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’ উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. রেজাউল করিম যুগান্তরকে বলেন, ‘এই বয়সেও তিনি ভাতার কার্ড পাননি এটি দুঃখজনক। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তালিকা দেয়া হয়। চলতি বছরের তালিকায় নাম আছে কিনা বিষয়টি দেখে এবং যাচাই-বাছাই করে তার (বিষ্টপদ) ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।’